শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
সাহাব উদ্দীন,বিশেষ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি। পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজদের একজনেরও সন্ধান মেলেনি। পুড়ে যাওয়া ভবন ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) টিম উদ্ধারকাজ বন্ধ রেখেছে। তবে নিখোঁজরা বেঁচে আছেন বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল করে স্বজনদের জানানো হয়েছে, ‘নিখোঁজ সবাই ভালো আছেন। খুব শিগগিরই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
এরপর ওই মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে নিখোঁজদের উদ্ধার করতে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বজনরা। যদিও এখনও কাজ শুরু করেনি পুলিশ। (০১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরে নিখোঁজদের তিন জন স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ‘নিখোঁজরা বেঁচে আছেন’ অজ্ঞাত স্থান থেকে কল করে এমন তথ্য জানানোর পর গত ২৭ জানুয়ারি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিখোঁজ আমান উল্লাহর মা রাশিদা বেগম।
শনিবার সন্ধ্যায় রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আমান উল্লাহ রূপগঞ্জের একটি ব্যাটারি কারখানায় কাজ করতো। গাজী টায়ার কারখানায় যেদিন আগুন লেগেছিল, সেদিন আমান তার বন্ধু নাহিদকে সঙ্গে নিয়ে কারখানা দেখতে গিয়েছিল। এরপর দুজনের কেউ ফিরলো না। আজও তাদের সন্ধান পাইনি।
আমান উল্লাহ ও নাহিদ বেঁচে আছে দাবি করে রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে এখনও বেঁচে আছে। সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিন ছেলে মোবাইল সঙ্গে নিয়ে যায়নি। পরে তার ফোনে একাধিকবার কল এসেছে। আমার ফোনে একাধিকবার একটি নম্বর থেকে কল এসেছে। কিন্তু অপরপ্রাপ্ত থেকে কোনও কথা বলেনি। শুধু কল দিয়ে আমাদের কথা শোনে। পরে নিখোঁজদের স্বজন সিনথিয়ার সঙ্গে কথা বলে আরেকটি ফোন নম্বর পেয়েছি। সেই নম্বরে ফোন করে এক লোকের নিয়মিত কথা হয় সিনথিয়ার। ফোনের ওই ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে, আমার ছেলে দেখতে লম্বা-চিকন ও শ্যামলা। তার দেওয়া তথ্য মিলে গেছে। আমার ছেলেসহ সেখানে থাকা সবাইকে কাপড় দেওয়া হয়েছে বলে ওই ব্যক্তি জানিয়েছে। সেখানে অনেক লোক রয়েছে, তারা সবাই এ ঘটনায় নিখোঁজ। তাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী রমজানের আগে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলেছে। প্রতি মাসে ফোন দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয় ওই ব্যক্তি। তবে টাকা কিংবা অন্য কিছু দাবি করেনি। এখন পুলিশ সেই নম্বর ট্র্যাকিং করে বের করলেই আসল ঘটনা জানা যাবে। এজন্য এসপির কাছে অভিযোগ দিয়েছি, যাতে তাদের সন্ধান করা হয়।’
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার রাতের একটি গাড়িতে করে অনেক লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেদিন রাতে একটি গাড়িতে করে অনেক লোকজনকে নিয়ে গেছে কিছু লোকজন। অসুস্থতার কথা বলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে হাসপাতালে গিয়ে কারও খোঁজ পাইনি আমরা।’
রূপগঞ্জের বরাব এলাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমান উল্লাহ বসাবাস করতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের মতো আরও অনেক নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য জানিয়ে পরিবারের কাছে ফোন করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিরা বেঁচে আছে বলে জানিয়েছে। পুলিশ এখন ওসব নম্বর ট্র্যাকিং করলেই তাদের পাওয়া যাবে।’
অগ্নিকাণ্ডের পর প্রথম কল আসে নিখোঁজদের স্বজন সিনথিয়া আক্তারের কাছে। অজ্ঞাত নম্বর থেকে কলটি এসেছিল। এ বিষয়ে সিনথিয়া আক্তার বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমার পরিবারের তিন জন নিখোঁজ রয়েছে। বড় ভাই শাহাদাত শিকদার, ছোট ভাই সাব্বির শিকদার ও ভগ্নিপতি জামির আলী।। তারা নিখোঁজ হওয়ার আট দিন পর একটি নম্বর থেকে আমার কাছে কল আসে। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন আগামী রমজানের আগে সবাইকে ছেড়ে দেবে। একটি বাহিনীর লোকজন গাজী কারখানার পেছনের গেট দিয়ে তাদের অন্য একটি স্থানে নিয়ে গেছে। ফোনের ওই ব্যক্তি সব সময় আমাদের বলে আসছে, আপনারা চিন্তা কইরেন না। তারা সবাই চলে আসবে। ২২২ জন জন লোক আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তবে ওই ব্যক্তি তার নাম-পরিচয় কখনও বলেনি।